সিঙ্গাপুরে প্রায় ৩ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত সিঙ্গাপুরে অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন এসব শ্রমিক। বিশেষ করে বাংলাদেশি অভিবাসী আক্রান্ত হয়েছেন সবচেয়ে বেশি।
গতকাল রোববার (১৯ এপ্রিল) পর্যন্ত ২ হাজার ৯২২জন বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক আক্রান্ত হয়েছেন। সিঙ্গাপুরে এখন করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৬ হাজার ৫৮৮ জন। এর মধ্যে অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি, বিশেষ করে বাংলাদেশি অভিবাসী আক্রান্ত হয়েছেন সবচেয়ে বেশি।
গতকাল পর্যন্ত ২ হাজার ৯২২ জন। শুধু ১৯ এপ্রিল বাংলাদেশি অভিবাসী আক্রান্ত হয়েছেন ৩২১ জন। বাংলাদেশি আক্রান্তের পরপরই ভারতীয় শ্রমিক বেশি আক্রান্ত হয়েছেন, যার সংখ্যাও ১৬০০ ছাড়িয়েছে। এরইমধ্যে সিঙ্গাপুরে লকডাউনের মেয়াদ বাড়নো হয়েছে।
আজ সোমবার (২০ এপ্রিল) থেকে আগামী ৪ মে পযর্ন্ত পুরোপুরি লকডাউন করা হয়েছে সিঙ্গাপুর। শুধু জরুরি কাযর্ক্রম চালু থাকবে। দেশটিতে করোনা ভাইরাস ধরা পড়ার পর লকডাউনসহ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কঠোর অবস্থান নেয়ার পর নিয়ন্ত্রণে থাকে পরিস্থিতি। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ভয়াবহ উঠছে সিঙ্গাপুর।
বিশেষ করে অভিবাসী কর্মীদেরও মধ্যে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিঙ্গাপুরে প্রাণঘাতী করোনায় প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
দেশটির ডরমেটরিগুলোতে গাদাগাদি করে বসবাস করার কারণেই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন প্রবাসীরা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এসব ডরমিটরিতেই আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে।
সিঙ্গাপুরে সবচেয়ে বড় ক্লাস্টার হিসেবে পংগল এস ১১ ডরমেটরিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ১৩টি ডরমেটরিকে আইসোলেশন হিসেবে ঘোষণা করে দেশটি।
আরো পড়ুন: যারা হাত পেতে চাইতে পারছে না, তাদের গোপনে সহায়তা দেয়া হবে -পুলিশ কমিশনার
পৃথিবীটা আজ নিস্তব্ধ কোন যুদ্ধ হয়নি, প্রয়োগ হয়নি কোন পরমাণু বোমা । চীন, আমেরিকার, রাশিয়া কেউ একটি গুলিও খরচ করেনি। তবুও ইউরোপ আমেরিকা থেকে শুরু করে বাদ যায়নি এশিয়ার মানুষ সবার মনে ভয় আর আতংক ।
মহামারী করোনা ভাইরাস পৃথিবীটাকে আজ বড় অসহায় করে দিয়েছে । সম্পদ ও সুখের দেশ ইতালি, স্পেন, আমেরিকা যেন আজ মৃত্যুপুরী হয়ে গেছে । সাড়া পৃথিবীতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রায় ১লক্ষ মানুষ মৃত্যু বরন করেছে । কোথাও যেন আজ জীবনের নিরাপত্তা নেই ।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে অনেক দেশ অনির্দিষ্ট কালের জন্য লগডাউন ঘোষণা করেছে । উন্নত দেশগুলো ভাইরাস প্রতিরোধ করতে ও জনগণের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমসিম খাচ্ছে । চীনের উহান শহর থেকে শুরু করে ইউরোপ আমেরিকা ছাড়িয়ে করোনা এখন বাংলাদেশে ।
জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বাংলাদেশও বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে । জনসাধারণকে নিরাপদ রাখতে অফিস আদালত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে অনেক আগেই । জনসমাগম রোধ করতে দোকানপাট, হাটবাজার থেকে শুরু করে মসজিদ সব জায়গায় রয়েছে বিধি নিষেধ ।
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৮শ মানুষ এবং এদের মধ্যে ৩৯জন ইতোমধ্যে মারা গেছে । এলাকা নিরাপদ রাখতে আক্রান্তদের বাড়িগুলো করা হয়েছে লগডাউন। সাড়া দেশে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ও প্রয়োজন ছাড়া কেউ যেন বাহিরে বের না হয় সেজন্য কঠোর অবস্থানে রয়েছে দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সাড়া দেশের ন্যায় বরিশালেও কাজ করে যাচ্ছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ, বিএমপি সদস্যরা । বরিশালে ইতিমধ্যে দুজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের একজনের বাড়ী বাকেরগঞ্জ ও অন্য জনের বাড়ী মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় ।
দুজনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বরিশাল জেলা প্রশাসন, পুরো বরিশাল জেলা লগডাউন ঘোষণা করা হয়েছে । বরিশাল নগরবাসীকে নিরাপদ রাখতে জনকল্যাণ মূলক প্রচারনা ও করোনা ভাইরাস প্রতিরোধমূলক সকল কাজে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ,বিএমপি কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান বিপিএম বার ।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের ভয়ে বরিশালবাসী যখন হতাশ হয়ে পড়েছিল ঠিক তখন তিনিই প্রথম আশার আলো দেখিয়েছিলেন নগরবাসীকে । বিএমপি কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান বিপিএম বার এর নির্দেশনায় প্রচার প্রচারণা করাসহ সর্বপ্রথম নগরীতে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ওয়াটার ক্যানন দিয়ে জীবানুনাশক স্প্রে করা হয়েছিল ।
লিফলেট বিতরণ ও হ্যান্ডমাইক দিয়ে প্রচারণার পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে নগরীর রাস্তা, বাজার এবং বিভিন্ন দোকানে রং দিয়ে আঁকা হয়েছে দূরত্ব সূচক চিত্রাংকন । করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করতে অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণ করেছেন মাস্ক হ্যান্ডস্যানিটাইজার ও প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র।
জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন নগরীতে চলাচল করা যানবাহনেও । এমনকি বিশেষ কিছু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ছাড়া চালাতে পারবেনা মোটরসাইকেলও। বরিশালে বহিরাগত যানবাহন প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করে শহরের মূল প্রবেশপথে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট ।বরিশাল এখন পুরোপুরি লগডাউন হয়ে গেছে ।
লগডাউনের কারনে রাস্তা ঘাট ফাঁকা হয়ে গেছে এর ফলে বেকার হয়ে পড়েছে অনেক শ্রেণী পেশার মানুষ । এদের মধ্যে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত অন্যতম । প্রতিটি পরিবারের মানুষের মনে একটা অস্থিরতা বিরাজ করছে। কি হবে কবে হবে, কাজ নাই ঘরে খাবার নাই । হাতে যা কিছু অর্থ ছিল তাও এখন শেষের দিকে। কবে কাজে বের হতে পারবো এমন চিন্তা ভাবনা এখন প্রতিটি মধ্যবিত্ত পরিবারের মাঝে ।
হতদরিদ্র মানুষ গুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন থেকে সহযোগিতা পেলেও দৃষ্টির আড়ালে রয়ে গেছে মধ্যেবিত্ত কর্মহীন পরিবারগুলো । সামাজিক ও লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু বলতেও পারছে মধ্যেবিত্ত পরিবারের মানুষগুলো । হঠাৎ বিপদগ্রস্থ মানুষগুলো যে ভাবে পারছেন সেভাবেই দিন কাটাচ্ছেন।
ঘরে থাকুন নিরাপদে থাকুন আমরা পাশে আছি আমরা পাশে থাকবো এমন কথা অনেকে বললেও এখন কেউ খোঁজ নিচ্ছে না দেশ লগডাউনের কারনে কর্মহীন হয়ে পড়া এই পরিবারগুলোর। এবার বলতে না পারা পরিবার গুলোর পাশে দাঁড়িয়েছেন বিএমপি কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান বিপিএম বার । তারই নির্দেশনায় গোপনে গিয়ে ত্রান সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা।
হাদিসে বর্নিত আছে ” তোমরা এমনভাবে দান করো যেন ডান হাতের দান বাম হাত না জানে ” হাদিসের কথা অনুসরণ করে কাজ করে যাচ্ছে বিএমপি কমিশনার ।মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়ার কাজে সহযোগিতা করছেন স্টাফ অফিসার মোঃ আঃ হালিম মিয়া সহকারী পুলিশ কমিশনার বিএমপি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান বিপিএম বার বলেন, যে সমস্ত মানুষ লাইনে দাঁড়াতে পারছেন না তাদের কথা চিন্তা করে আমরা কাজ করে যাচ্ছি । অনেকে আমাদের কাছে ফোন করে যোগাযোগ করেন, অথবা অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে আবেদন করেন তাদেরকে আমরা তাৎক্ষণিক ভাবে খাবার পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করি ।
নগরীর অনেক পাড়া, মহল্লা ও এলাকার গলিতে মধ্যেবিত্ত পরিবার বসবাস করে।যারা মানুষের কাছে হাত পেতে চাইতে পারছে না আমরা জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে করে তাদের সহযোগীতা করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, এখন মানুষকে ঘরে রাখাই আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোন বিকল্প নেই।
তাই আমরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে কাজ করে যাচ্ছি । বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে গোপনে খাবার পেয়ে অনেক পরিবার অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন । বিপদের সময় মানবিক কাজের মাধ্যমে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিএমপি কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান সুবিধাভোগী পরিবারগুলো ।
তাই আমরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে কাজ করে যাচ্ছি । বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে গোপনে খাবার পেয়ে অনেক পরিবার অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন । বিপদের সময় মানবিক কাজের মাধ্যমে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিএমপি কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান সুবিধাভোগী পরিবারগুলো ।