নিউজ ডেস্ক :
কক্সবাজারের উখিয়ায় রাজাপালং মাদ্রাসা লাগোয়া ২টি অবৈধ স’মিল গিলে খাচ্ছে শতশত একর সামাজিক বনায়নের গাছ। বন বিভাগের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় চলমান ২টি করাতকলে বনসম্পদ ধংসযজ্ঞ অপ্রতিরূদ্ধ হয়ে উঠেছে। মাঝেমধ্যে যৌথবাহিনী মিনি স’মিল উদ্ধারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও তা হতাশা ব্যাঞ্জক৷
একটি সমিল বসানো হয়েছে রাজাপালং মাদ্রাসার পাশে বসবাসরত সিরাজুল মুরশিদের নেতৃত্বে নিজ বাড়ির আঙ্গিনায়। সিরাজুল মুরশিদ অস্বীকার করে বলেন, কে-বা কারা এই স’মিল বসাইছে তা আমি অবগত নই৷ অন্যটি প্রায় ২০-৩০ জন সিন্ডিকেট নিয়ে বনবিভাগকে ম্যানেজ করে পরিচালনা করছে অবৈধ স’মিল৷
পরিবেশবাদী সচেতন মহল দাবি করছেন, দুইটি স’মিল মালিকদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে মামলা রুজু করা না হলে রাজাপালং মাদ্রাসা বন্ধের পাশাপাশি প্রকৃতিক পরিবেশ বিলুপ্ত এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মত ভয়াবহ দূর্যোগের সাথে মোকাবেলা করতে হবে৷ এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷
রাজাপালং মাদ্রাসা ছাত্র কলিমুল্লাহ বলেন, আমরা ক্লাস করতে পারি না এই করাত মিলের কারণে। করাতমিল চালু করলে বড়বড় আওয়াজ করলে স্যারের ক্লাসে কি বলে সেটা ঠিক মতো শুনতে পারিনা৷
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আমার ছেলে মেয়েরা লেখাপড়া করতে পারছে না করাতমিলের কারণে। সকাল সন্ধ্যা বা রাতেও তারা করাতমিল চালাই৷ যার কারনে পড়ালেখা করা সম্ভব হচ্ছে না৷
পরিবেশবাদী সংগঠনের অভিমত, অবৈধভাবে গড়ে ওঠা স’মিলের কারণে সামাজিক বনায়ন বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে৷ শুধু তাই নয়, সামগ্রিক পরিবেশ উন্নয়নে সরকার কাজ করলেও তা কার্যকর বাস্তবায়ন হচ্ছে না৷ এর নেপথ্যে বনবিভাগের একশ্রেণীর কর্মচারী, ভিলেজার নামদারী টাউট বাটপার ও স্থানীয় বনসম্পদ নির্ভর কিছু সংখ্যক হতদরিদ্রের কারণে সরকারের মহান উদ্যোগ বনায়ন সৃজন কার্যক্রম ভেস্তে যাচ্ছে৷
সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুই মিটারের মধ্যে স’মিল বসানো যাবে না এবং সকাল ৬ টাকা থেকে সন্ধ্যা ৬টার পর কোনো স’মিল চালানো যাবে না। তারা সরকারি নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে রমরমা অ’বৈধ সমিল বানিজ্য৷
সংগৃহীত তথ্যনুযায়ী মরিচ্যাপালং, বড়বিল, রুমখাঁ বাজার, ভালুকিয়া, কোটবাজার ঝাউতলা, হিজলিয়া, রাজাপালং, হাজিরপাড়া, হরিণমারা, মাছকারিয়া, ফলিয়াপাড়া, ডিগিলিয়া, কুতুপালং, পালংখালীর বেশকয়েকটি যায়গায় প্রায় অবৈধ মিনি স’মিল সবুজ সম্পদ ধংস করছে।
সম্প্রতি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) তাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশ বনবিভাগ যৌথ অভিযান চালিয়ে কোটবাজার ও পালংখালী থেকে ৪টি মিনি স’মিল উদ্ধার করলেও অন্যান্যগুলো বহালতবিয়তে৷ বনকর্মিরা বলছে, এসব স’মিল গুলো এমন ভাবে ফিটিং করা হয় যা মূহুর্তে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব৷ যে কারণে স’মিল গুলো উদ্ধার করা যাচ্ছে না৷
স্থানীয়ের দাবি অভিযান শুরুর আগে স’মিল মালিকেরা খবর পেয়ে যায়৷ ফলশ্রুতিতে সমিলের অন্যান্য অবকাঠামো থাকলেও সমিলটি উধাও হয়ে যায়।
উখিয়ার ওয়ালা পালং বিট কর্মকর্তা মো বজলুর রশিদ বলেন, গতবছর অভিযান চালিয়ে স’মিল গুলো উদ্ধার করা হয়েছিল। এবার অভিযান পরিচালনা করে সমিলগুলো উদ্ধার করা হবে৷
উপজেলা রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম বলেন, বনসম্পদ উন্নয়ন ও সংরক্ষণের জন্য অবৈধ স’মিল উদ্ধার এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে৷
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, যেসব অবৈধ স’মিল বসানো হয়েছে তা দ্রুত অভিযানের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷
তিনি আরও বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে পাহাড় কাটা, বালু উত্তলন, সমাজিক বনায়ন ও সরকারি বনসম্পদ ধ্বংসকারী দূবৃর্ত্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ এব্যাপারে স্থানীয়দের আন্তরিকতা বিকল্প নেই।
ukhiyanews
0 coment rios:
ধন্যবাদ আপনার সচেতন মন্তব্যের জন্য।